রাত দু’টা বাজে আনুমানিক।
লেখার কাজটা শেষ করা মাত্রই কারেন্ট চলে গেল। বিরক্তির বদলে আনন্দিত হলাম।
যাক বাবা! কাজ তো শেষ হয়েছে! এই ভাল।
ঐতিহ্যবাহী ইউপিএসটা নষ্ট হয়েছে দুদিন আগে। ব্যস্ততার কারণে ঠিক করাতে নিয়ে যেতে পারছি না। পুরো মেস ফাঁকা। কাউকে দিয়ে যে একটা কাজ করাব, সেই সুযোগটা নেই।
হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠল। সাইফুলের কল।
ছেলেটা ইদানীং বেশ বিরক্ত করে ছাড়ছে। অল্প কিছুদিন হল মেডিকেলে এ্যাডমিশান নিয়েছে, এই এক দেড় বছরের মত হবে। কিন্তু এখনই ডাক্তারীভাব! কবে জানি তাকে আমার ব্লাড গ্রুপ জানিয়েছিলাম। এখন মনে হচ্ছে সেটাই কাল হয়ে দাড়িয়েছে।
আমার রক্ত নাকি দুষ্প্রাপ্য!
গত কয়েক দিন ধরে, সময় নেই অসময় নেই শুধু কলের পর কল দিয়ে যাচ্ছে। বলে, রক্ত লাগবে। কি আজব! এত দেখি পুরোই মশাময় পরিবেশ!
দুষ্প্রাপ্য দেখে কি বিলিয়ে বেড়াতে হবে নাকি?
যত্তসব!
সাইলেন্ট করে ফেললাম সেল ফোনটা।
চার্জার অন না করেই বারান্দায় চলে আসলাম। জোঁছনার আলোয় চারপাশে আলো আঁধারের খেলা। কিছুটা অদ্ভুত হলেও সত্যি, বাতাস নেই! তার উপর ভ্যাপসা গরম। এই পূর্ণিমার রাতে! ভ্যাপসা গরমে আমার বেশ ভাল ঘুম হলেও, আজ কেন যেনো ঘুম আসছে না।
জানালার পাশে রাখা সিগারেটের প্যাকেটটা হাতড়ে হাতড়ে খুঁজে বের করে ধরালাম। পূর্ণিমার রাতে, পুরো এলাকায় জেগে একা এক যুবক, ঠোঁটে জ্বলন্ত সিগারেট! ভাবতেই কিছুটা রোমাঞ্চিত হলাম। একটা গান গুন গুন করে গাইতে যাব এমন সময় ঠিক দুই বিল্ডিং পরের বাড়ির বারান্দায় একজন এসে উপস্থিত হল। ভগবান মনে হয় আমার এই “রোমাঞ্চিত হওয়া”-টা পছন্দ করে নাই!
মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। আর আমি মেজাজ খারাপ রাখি না। খুব দ্রুত ঝাল ঝেড়ে ফেলি আমার নিঃসঙ্গতার একমাত্র সঙ্গীর উপর। সিগারেট!
তার উপরের ঝালটা সিগারেটের উপরই ঝাড়লাম। কষে দিলাম এক টান। এক বুক ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে তাকালাম আকাশের দিকে।
পূর্ণ চন্দ্র!
তাতে যেন আগুন লেগেছে! সিগারেটের ধোঁয়া চারপাশে।
বেশ আধ্যাত্মিক অবস্থা।
মন ভাল হয়ে গেল।
হঠাৎ একটা শব্দ কানে এল। খুব কাছ থেকে না হলেও, খুব দূর থেকে যে নয় এতটুকু নিশ্চিত। প্রায় প্রাণহীন এলাকায় ক্ষীণ শব্দে কিছুটা ভড়কেই গেলাম। কারণ,
শব্দটা চুড়ির বলে মনে হল না?
ডান বাম করে চোখ চলে গেল অন্ধকার ঘরে। কিছুটা ভয় ভয় করলেও সহজাত স্বভাবে তা দমন করার চেষ্টা করলাম। মনে পড়ে গেল বরকতুল্লাহ্ আলমের কথা। “ফাজিল” পাশ করেছে, অমায়িক ছেলে। মুখে সবসময় হাসি লেগেই থাকে। মেসের ফাজিলগুলো যখন তাকে “আলাম্পানা” বলে সম্বোধন করে মজা করতে ব্যস্ত, তখন সে মানে প্রকৃত ফাজিল, থাকে নির্বাক।
একদিন এক গভীর রাতে আমার বিছানার পাশে এসে ফিসফিস করে বলতে লাগল,
সাঈদ ভাই, শুনতে পাচ্ছেন?............ও সাঈদ ভাই! শুনতে পাচ্ছেন?
কিছুটা বিরক্তই হয়েছিলাম মাত্রই ঘুমিয়েছিলাম বলে। ছেলেটার কান্ডজ্ঞানে কিছুটা সমস্যা আছে। বিরক্তি মেশানো কন্ঠেই বলে উঠেছিলাম,
কি?
ঐ যে! শুনতে পাচ্ছেন না?
শফিকের নাক ডাকার শব্দ? এ আর নতুন কি! এই কথা বলার জন্যই এত রাতে ঘুম থেকে ডাকলে?
আরে না ভাই! শুনতে পাচ্ছেন না?.........আরেকটু খেয়াল করে শোনার চেষ্টা করুন না!
প্রচন্ড বিরক্তিতে তখন বিছানায় উঠে বসেছিলাম। কঠিন কিছু বলতে যাব এমন সময় আমিও যেন কিছু একটা শুনতে পেলাম! আরেকটু খেয়াল করতেই মনে হয়েছিল, খুব কাছে অথচ খুব ক্ষীণভাবে কেউ একজন মুখ চেপে কাঁদছে! এই ঘরে শুধু আমি আর বরকতুল্লাহ্ থাকি। পাশের ঘরে ততক্ষণে সবার ঘুমিয়ে পরার কথা। অন্তত কাঁদছে না কেউ, এটা নিশ্চিত।
তাহলে? এ শব্দের উৎস কই?
কি..........বলেছিলাম না ভাই.......... এখন বিশ্বাস হল তো! এই রুমে পরী থাকে। অতৃপ্ত পরী। রোজ রাতে এই সময়ে তার কান্না শব্দ শোনা যায়। আপনাকে তো আগেই বলেছিলাম। বিশ্বাস করেন নাই। এখন তো শুনলেন। কি করবেন এখন?
তাই তো ভাবছিলাম। কি করব। এক পরী না পেতœী, আমার ঘরে এসে ঘড়ি ধরে নিয়ম করে কেঁদে যায়। আর জায়গা পেল না!
তাও আবার অতৃপ্ত পরী! আত্মা না! জীবনে প্রথম শুনলাম। বিস্ময়ের ঘোর কাটতে না কাটতেই বরকত বলে উঠেছিল,
ভাইজানের কি শরীর পাক?
প্রশ্নটা শোনার পর কিছুটা চিন্তায়ই পড়ে গিয়েছিলাম। যুবক পোলা। বিয়ে শাদী করি নাই। গোসলও করেছিলাম এর ঠিক দুদিন আগে। শরীর পাক থাকে কেমনে! ডানে বামে ঘাড় নাড়তেই বরকত কিছুটা হতাশ হয়ে বলে উঠল,
ঠিক আছে। কোন সমস্যা নাই। আমার সাথে সাথে ------- সূরাটা পড়েন। পরীর বাপসহ পালাবে। এমন কি আশেপাশের এলাকা থেকে কয়েকটাকে নিয়েও পালাতে পারে!
আমি পড়তে লাগলাম এবং যথারীতি অন্যান্য দিনের মত (বরকতের ভাষ্যমতে) ঐ দিনও নির্দিষ্ট সময়ের পর পরীর প্রস্থান হয়েছিল!
কিন্তু, সূরাটা যেন কি ছিল? ভাবতে লাগলাম।
স্নায়ুবিক দূর্বলতার কারণে কিছুতেই মনে করতে পারছি না। অবশেষে সব চিন্তা বাদ দিয়ে “কুলহু আল্লাহ্” পড়তে পড়তে ঘরের ভেতর অশরীরীর অস্তিত্ব খোঁজার চেষ্টা করতে লাগলাম। সিগারেটের প্যাকেটটা হাতে নিতেই বুঝতে পারলাম হাত কাঁপছে, তবে খুব অল্প। আগেরটা শেষ হয়ে গেছে। নতুন সিগারেট ঠোঁটে নিয়ে কাঠি জ্বালানোর সাথে সাথে মগজও যেন জ্বলে উঠল। আরেএএ! আমি তো একা না! এত ভয় পাওয়ার কি আছে!
চোখ চলে গেল পাশের বাড়ির ঐ “একজন”-এর দিকে। কেউ একজন দাড়িয়ে আছে, এটা নিশ্চিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে না।
ব্যাপারটা কি?
আজ না পূর্ণিমা!
তাকালাম আকাশের দিকে। পুরো আকাশ ফাঁকা। কেবল এক চিলতে মেঘ চাঁদকে হাসতে দিচ্ছে না। বুঝতে পারলাম, আমি আজ কারো রসিকতার স্বীকার। কি আর করা! একাকীত্ব আর ভয়, এই দুই ভাইকে একইসাথে বিদায় জানানোর জন্য ঝাঁপসা আলোতেই ঐ অবয়বের দিকে চেয়ে রইলাম, আর উস্কে দিতে লাগলাম সিগারেটের লাল আগুন।
কিছুক্ষণ পর মেঘ সরে গেল। আর তার সাথে সাথেই পূর্ণিমার শুভ্র কিন্তু আবছা আলোয় যেন উদ্ভাসিত হল এক অতি রমনীয় বাক! বিস্মিত আমি ভ্যাবলার মত তাকিয়ে রইলাম সেদিকে। বুকের ভেতর ঘড়িটার ঢিব ঢিব শব্দ যেন বাইরে থেকেও শুনতে পাচ্ছি। কিছুই বুঝতে পারলাম না। যতটুকু পারলাম তা হল, আজ রাতের পরিবেশ কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে খুব দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। যেমন, আধ্যাত্মিক থেকে ভীতিকর!
আর ভীতিকর থেকে?
রোমান্টিক??
নিজের চিন্তা-ভাবনা দেখে নিজেই হেসে ফেললাম। সাথে সাথে গ্রাম্য একটি প্রবাদের কথা মনে পরে গেল, যেটা কথায় কথায় আমার এক দুঃসম্পর্কীয় নানী খুব ব্যবহার করত। সেটা হল, “গাছে ধরছে আম, কাউয়ায় কয় খাম!” প্রবাদটা অদ্ভুত। এত পক্ষী থাকতে কাকপক্ষীর কথাই কেন বলা হল তা আজ পর্যন্ত আমার মাথায় আসে না। ধরে নেয়া যেতে পারে, এই প্রবাদের জন্মদাতা একজন “কাউয়া” বিদ্বেষী। যার কিনা একটি আম গাছ ছিল এবং সেই আম গাছের আমের স্বাদ আস্বাদন করার ইচ্ছা পোষণ করেছিল জনৈক “কাউয়া”! অনিরাপত্তাজনিত কারনেই হোক কিংবা, অপরিসীম ক্ষোভের জন্যই হোক, প্রবাদের জন্মদাতা হয়ত আপন মনেই স্বগোক্তি করেছিলেন।
থাক সেসব কথা। শুয়ে পড়া দরকার। কাল আবার একটু পত্রিকা অফিসে যেতে হবে, এরফান ভাইয়ের সাথে দেখা করতে। উনি ডেকেছেন। অনেক দিন পর। নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ কোন কাজে। অকারনে ডাকার মানুষ উনি না। হয়ত নতুন কোন প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলবেন, যা এই মুহূর্তে আমি হন্যে হয়ে খুঁজছি। কিন্তু, মন এখন তা বুঝতে চাইবে কেন, তাও আবার এমন পূর্ণিমার রাতে, কোন এক ঊর্বশী যখন স্বরূপে আবির্ভূত হয়েছে!
দাড়িয়ে রইলাম। মেয়েটা যেন পাথর দিয়ে গড়া। প্রায় পাঁচ মিনিট হতে চলল, একবারও নড়তে দেখেছি বলে মনে পরছে না। “শিকড় গজিয়ে যাবে তো! মাইয়া নড়ে না কেন?” আপন মনেই বিরবির করে উঠলাম। আর তার সাথে সাথেই মনের কথা তার কাছে যেন পৌছে গেল। একটু নড়েচড়ে দাড়ালো। তাও আবার চাঁদের দিকে মুখ করে। আমার তো পোয়া বার! সটান হয়ে দাড়িয়ে পরলাম।
চোখে পড়ল সুন্দর একটি মুখ। আসলেই কি সুন্দর? হাত দিলাম চোখের উপর।
না চশমা তো পরি নাই। তাহলে দেখলাম কিভাবে?
বেশ চিন্তার বিষয়! মাইনাস টু-এর চশমা পরা এক ছেলের কাছে কি এতটুকু দূরত্বে থাকা কোন মেয়ের মুখ ভাল করে দেখা সম্ভব?
কিন্তু, আমি তো দেখতে পাচ্ছি!
ঐ যে!
তার সিক্ত দুটি গাল! চাঁদের আলোয় চিক্ চিক্ করছে!
অশ্রুধারায়??
কিন্তু কেন???
কান্না জিনিসটা সবসময়ই মানুষের বিরক্তির কারন। যার সাথে আবার চলে আসে আরেকটি শব্দ, আর সেটা হচ্ছে সান্ত¡না।
একজন কান্নারত মানুষের সাথে থাকলে, সান্ত¡না দেয়াটা যেন একটা দায়িত্বের পর্যায়ে পরে। যা অধিকাংশ মানুষের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য। মজার বিষয় হল, এক্ষেত্রে আমার যোগ্যতা প্রায় শূন্যের কোঠায়। তাই যেখানে কান্না, সেখানে আর না! তবুও কান্না আমার পিছু ছাড়ে না!
বুঝতে শেখার পর থেকে ছোটবেলায় মাকে কাঁদতে দেখতাম। প্রায় প্রতি রাতেই। কিছু জিজ্ঞেস করলেই নানার কথা বলত, যিনি মারা গেছেন আমার জন্মের আগে। নানাকে মা ভালবাসত, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু, এতদিনেও কি তার অশ্রু শুকায় নি?...........আচ্ছা! অশ্রু কি কখনো শুকায়? নাকি শুধু উপলক্ষ বদলায়?
মাঝরাতে প্রায়ই ঘুম ভেঙ্গে যেত বাবা মার কথা কাটাকাটিতে। সারাদিন দুজন চাকরি করে এসে রাতে করত রুটিন মাফিক ঝগড়া। যার একটি নির্দিষ্ট বিষয়ও ছিল..........সায়মা খালা। ছিপছিপে গড়নের এক কিশোরী, মার দুঃসম্পর্কের চাচাতো বোন। মা তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে তার কাজে সাহায্যের জন্য।
সায়মা খালা আমাকে খুব আদর করত। নিজ হাতে গোসল, খাওয়া দাওয়া সবই করাত। বাড়ির কাজেও কখনো কোন অনাগ্রহ দেখেছি বলে মনে পরে না। কিন্তু একটা নির্দিষ্ট সময় পর, খালা আমাদের সাথে থাকুক মা তা চাইত না, আর বাবা ঠিক ততটুকুই চাইত! কেন? বুঝতাম না। শুধু মার উপর রাগ হত। খালা চলে গেলে আমি একা হয়ে যাব, তা কি সে বোঝে না? একদিন সকল ঝগড়ার পরিসমাপ্তি ঘটল। সায়মা খালা বাথরুমে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে গেল। মা তাকে সাথে সাথে নিয়ে গিয়েছিল হাসপাতালে। সায়মা খালা অপারেশান থিয়েটারে, মা আর আমি বাইরে। আমি কিছুই বুঝতে পারছিলাম না, শুধু কাঁদছিলাম। আমার সাথে সাথে মাও কাঁদছিল। প্রায় এক ঘন্টা পর, অপারেশান থিয়েটার হতে ডাক্তার বের হলেন। মা আমাকে তার কোল থেকে নামিয়ে এগিয়ে গেল।
সায়মার কি অবস্থা ডাক্তার?
(কিছুটা ভ্রু কুঁচকে) যে অবস্থায় নিয়ে এসেছেন, তার থেকে বাজে অবস্থা। পেশেন্ট কি হয় আপনার?
আমার বোন হয়।
কথাটা শুনেই ডাক্তারের প্রতিক্রিয়া হল ত্বরিত।
তো নিজের বোনের দিকে একটু খেয়াল রাখতে পারেন না? কতটুকুই বা বয়স। এত কম বয়সেই.............হাহ্!................এবোরেশানের সময় অনেক ব্লিডিং হয়েছে। আমাদের পক্ষে যা করা সম্ভব, আমরা করেছি। বাকিটা আল্লাহ্র হাতে। তার কাছে চান।
সায়মা খালার সাথে শেষ দেখা যখন হয়েছিল, তখনকার কথা খুব একটা বেশি মনে নেই। শুধু এতটুকু মনে পরে, খালা বার বার মার কাছে ক্ষমা চাইছিল। বিরবির করে বলছিল,“আমারে মাফ কইরা দিস আফা।” আর মার অশ্রু যেন বাঁধ মানছিল না। হু হু করে কাঁদছিল আর বলছিল,“তুই আমাকে মাফ করে দিস।” এর পরপরই ছোট মামা আমাকে কাঁধে করে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরে। আমাকে আমার পছন্দের আইসক্রিম কিনে দেয়। আইসক্রিম পেয়ে তো আমি মহা খুশি! খেতে খেতে তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
মামা!
কি মামা!
সায়মা খালার কি খুব বড় কোন অসুখ করেছে?
(বিস্মিত হয়ে) না তো! কে বলল?
তাহলে সবাই কাঁদছে কেন?
(এক গাল হেসে) আরে বোকা! তোমার খালার বিয়ে ঠিক হয়েছে। বিয়ের পর দেশের বাইরে চলে যাবে।
আর আসবে না?
আসবে। তবে অনেক দিন পর আসবে তো, তাই সবাই কষ্ট পাচ্ছে।
সেদিনের পর থেকে সায়মা খালাকে আর দেখি নি। হাসপাতাল থেকে মা আমাকে নিয়ে চলে আসেন সরাসরি তার বাবার বাড়ি।
আর আমার বাবা?
মামাদের কাছে জানতে পেরেছিলাম বাবা সুইডেন গিয়েছে এবং সেখানে সে আবার বিয়ে করেছে। এর ঠিক দু’বছর পর মা ও পাড়ি জমায় দূরদেশে। সে আর ফেরে নি।
কেউ কখনো ওখান থেকে ফিরতে পারেও নি।
টিপ টিপ করে ঘাম পড়ছে শরীর থেকে। এক ফোঁটা গিয়ে পড়ল ঠিক সিগারেটের উপর! তাড়াহুড়ো করে কয়েকটা টান দিয়ে শুকিয়ে ফেললাম।..............ঊর্বশী এখনো দাড়িয়ে আছে তার অতি রমনীয় বাঁকগুলোকে আরও বাঁকিয়ে! জোঁছনার আলোতে তা প্রতিফলিত হয়ে চোখে এসে যেন জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে।
এখনও চিক্চিক্ করছে তার গাল। এই বয়সী একটি মেয়ে, কি কারনে কাঁদতে পারে? এত কিসের কান্না? বয়সের দোষে? মানে প্রেম বিষয়ক কিছু?
তাই হবে। ছ্যাঁকা টাইপের কিছু একটা। কিন্তু এতে এত কান্নার কি আছে?
কথায় আছে না,
Failure is the pillar of success!
সুতরাং, যত বেশি পিলার গাড়া যাবে, ততই মঙ্গলজনক। আর একটা দু’টা পিলার আশেপাশের প্রতিবেশিদের মধ্যে হলে মন্দ হয় না, আর সেটা যদি হয় আবার দুই তিন বিল্ডিং দূরত্বে।
শিমু নিশ্চয়ই আমাকে ভেবে এখন আর কাঁদে না। ও বেশ প্রাকটিকাল একটি মেয়ে। বরং ঘৃণা করতে পারে, অনেক বেশি। আজকালকার প্রেম বিষয়ে মেয়েদের এক বুক ভালবাসা, ঘৃণায় রূপান্তরিত হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমার তাই মনে হয়।
হয়ত দরকার একটু হাওয়া। গরম হাওয়া!
কিন্তু, শিমু কি আর দশ জনের মত? তাকে তো গরম হাওয়া কম দেই নি!
বাধ্য হয়ে পরে পুরো চুল্লিটাই দিতে হয়েছে!
আমার শিমুকে।
নাহ্!
সে আমাকে ভেবে কাঁদছে, অবশ্যই কাঁদছে!
এবং একদিন হয়ত তা শুকিয়েও যাবে, কিংবা উপলক্ষ বদলাবে।
তবে যত যাই হোক, এ রক্ত ছড়াতে দেয়া যাবে না! যে রক্ত এ দেহে বইছে, জ্বালা ধরিয়ে দিচ্ছে প্রতিটি মিনিট.........প্রতিটি সেকেন্ড..........অসংখ্য স্বপ্ন ভঙ্গের একমাত্র সাক্ষী হয়ে, তা ছড়িয়ে গেলেই বিপত্তি।
বিষাক্ত রক্ত শুধু এ দেহেই থাক। নচেৎ ধ্বংস করে দেবে তার আপনজনের সাজানো সবকিছু, ধীরে ধীরে, ংষড়ি ঢ়ড়রংড়হরহম - এর মত! কেড়ে নেবে কত শত স্বপ্ন, মিশিয়ে দেবে মাটির সাথে। নীল বিষে ছেয়ে যাবে চারপাশ। তাই................মন ভাঙ্গাটাই কি সহজ নয়?
কারেন্ট চলে এসেছে।
সিগারেটটাও প্রায় শেষ পর্যায়ে।
ইদানীং এই জিনিসটা একটু বেশিই খাওয়া হচ্ছে।
কমাতে হবে।
শেষ কয়েকটা টান দিয়ে অবশিষ্টাংশটা নিভিয়ে ফেলে দিলাম।
আমার সাথে সম্পৃক্ত একমাত্র এই বিষয়টাতেই শিমুর যত আপত্তি। কিন্তু, সে কি জানে? আমার জীবনে এটাই একমাত্র জিনিস, যা আমাকে কখনো ত্যাগ করে নি। এমন কি আমি চরম অপমান করা সত্ত্বেও!
ঊর্বশীকে আর দেখা যাচ্ছে না। সমস্যা নেই! আমারও ঘুমাতে হবে। নাহলে এরফান ভাইয়ের সাথে মিটিংটা মিস হয়ে যেতে পারে। হয়ত সুযোগটাও!
নাহ! মিস করা যাবে না।
ঘরে চলে এলাম। পাশাপাশি বাসা। সুতরাং, নো টেনশন! আবার দেখা হবে।
কাল নয় পরশু, অথবা অন্য কোন রাতে।
গভীর রাতে।
সেদিনও হয়ত কারেন্ট থাকবে না। থাকবে না কোন কোলাহল, আজকের মত।
হয়ত জোঁছনালোকিত কোন এক রাতে আবারো উদ্ভাসিত হবে.............
জোঁছনাস্নাত কোন এক অতি রমনীয় বাঁক!
দেখা হবে...........
মোহনীয় এক পরীর সাথে।
অতৃপ্ত পরী!
সেদিন অবশ্যই জানতে চাইব তার কষ্টের কথা।